Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

ট্রাম্প কি ইরানের পারমাণবিক শক্তি হওয়ার সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে দিলেন?

 

ট্রাম্প কি ইরানের পারমাণবিক শক্তি হওয়ার সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে দিলেন?

কয়েক দশক ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরান সতর্কতার সাথে এমন একটা সীমারেখা অতিক্রম করাকে এড়িয়ে চলেছে যা সরাসরি সামরিক সংঘর্ষের দিকে এগিয়ে নিতে পারে।

আমেরিকা সম্ভবত মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বিপজ্জনক যুদ্ধে জড়িয়ে যাবে এই আশঙ্কায়, একের পর এক আমেরিকান প্রেসিডেন্ট এই ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে তাদের সামরিক শক্তি মোতায়েন করা থেকে বিরত ছিলেন।

এখন মার্কিন সর্বাধিনায়ক ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি একজন শান্তিবাদী রাষ্ট্রপতি হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি তেহরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে সরাসরি সামরিক হামলা চালিয়ে সেই সীমারেখা অতিক্রম করেছেন।

এটা একজন প্রেসিডেন্টের দ্বিতীয় মেয়াদে নেয়া এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ যিনি কিনা সমস্ত পুরানো নিয়ম-নীতি ভঙ্গ করার জন্য গর্ব করে থাকেন।

ইরানের পরবর্তী পদক্ষেপ আরও তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে। দেশটির ছিয়াশি বছর বয়সী সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি, যিনি এখন একটি বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে, তিনি তার সবচেয়ে শক্তিশালী শত্রুর বিরুদ্ধে একটা দীর্ঘ খেলায় সতর্কতার সঙ্গে প্রায় চার দশক পার করেছেন।

এটা তিনি করেছেন তার সবচেয়ে শক্তিশালী সম্পদ – ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য।

যদি তিনি খুব কম কিছু করেন, তাহলে সম্মান থাকবে না। আর যদি বেশি কিছু করে ফেলেন, তাহলে সবকিছু হারাতে পারেন।

"খামেনির পরবর্তী পদক্ষেপগুলো হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটা শুধু তার নিজের টিকে থাকার জন্যই নয় বরং ইতিহাসে তার নাম কীভাবে লেখা হবে সেটার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ," বলেন চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা প্রোগ্রামের পরিচালক সানাম ভাকিল।

"তার হাতে ধরা বিষপাত্রটি যেন সেই বিষের চেয়েও তীব্র, যা ১৯৮৮ সালে খোমেইনি অনিচ্ছায় পান করেছিলেন,''- ইরান-ইরাক যুদ্ধের ভয়াবহতা শেষে ইরানের প্রথম বিপ্লবী নেতার অনিচ্ছাসত্ত্বেও যুদ্ধবিরতি মেনে নেওয়ার তিক্ত সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন।

ট্রাম্প কি ইরানের পারমাণবিক শক্তি হওয়ার সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে দিলেন?


'এটা ইরানের কাঙ্ক্ষিত যুদ্ধ নয়'

ইরাকের সাথে আট বছরের যুদ্ধে যে ক্ষতি হয়েছে, গত দশ দিনে, ইরানের চেইন অব কমান্ড এবং সামরিক সরঞ্জামের উপর ইসরায়েলের তীব্র হামলা তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে, যেটা এখনও ইরানি সমাজে বড় প্রভাব রাখে।

ইসরায়েলি হামলার ফলে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় অনেক কর্মকর্তা এবং শীর্ষস্থানীয় পারমাণবিক বিজ্ঞানীরা নিহত হয়েছেন। এই সংঘাতে আমেরিকার প্রবেশ এখন চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে।

১৯৭৯ সালের ইরানি বিপ্লবের পর প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) দৃঢ়ভাবে সতর্ক করে দিয়েছে যে, তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এমন প্রতিশোধ নেবে যার ফলে তাদের "স্থায়ী অনুশোচনা" হবে।

কিন্তু বিপর্যয়কর ভুল এড়াতে তীব্র বাকযুদ্ধের আড়ালেও লুকিয়ে আছে জরুরি হিসাব-নিকাশ।

"এটি এমন কোনও যুদ্ধ নয় যেটা ইরান চায়," বলেন মিডল ইস্ট কাউন্সিল অন গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের হামিদরেজা আজিজ বলেন।

"তবে আমরা ইতোমধ্যেই দেখতে পাচ্ছি, শাসকগোষ্ঠীর সমর্থকরা এমন যুক্তি তুলে ধরছেন যে—যুক্তরাষ্ট্র আসলে কতটা ক্ষতি করেছে তা বড় কথা নয়, বরং ইরানের শক্তিশালী রাষ্ট্র ও আঞ্চলিক ক্ষমতার যে ভাবমূর্তি ছিল, তা এতটাই নড়বড়ে হয়ে গেছে যে, এর জবাব দেওয়া এখন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।"

তবে প্রতিটি প্রতিক্রিয়াই ঝুঁকিপূর্ণ। মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় ২০টি মার্কিন ঘাঁটির যেকোনো একটিতে অথবা চল্লিশ হাজারেরও বেশি আমেরিকান সেনার যে কারো উপর সরাসরি হামলা সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় ধরনের প্রতিশোধের সূত্রপাত ঘটাবে।

বিশ্বব্যাপী তেল পরিবহনের এক-পঞ্চমাংশের কৌশলগত জলপথ হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিলে সেটাও হিতে-বিপরীত হতে পারে কারণ সেটা এই অঞ্চলে আরব মিত্রদের পাশাপাশি ইরানি তেলের প্রধান গ্রাহক চীনকেও বিচলিত করে তুলতে পারে।

এই প্রধান 'কৌশলগত স্থান' রক্ষা করতে এবং উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ধাক্কা এড়াতে পশ্চিমা নৌ শক্তিগুলিকেও টেনে নিয়ে আসা হতে পারে।

সেই সাথে এই অঞ্চল জুড়ে ইরানের যেসব প্রক্সি ও অংশীদারদের নেটওয়ার্ক আছে, ইরান যেটাকে "ফরোয়ার্ড ডিফেন্স" হিসেবে বিবেচনা করেছিল, তার সবই গত বিশ মাসের যুদ্ধে ইসরায়েলি আক্রমণ এবং হত্যাকাণ্ডের ফলে দুর্বল বা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

আমেরিকার ক্রোধ না বাড়িয়ে ইরানের পাল্টা আক্রমণ চালানোর জন্য কোনও গ্রহণযোগ্য বিকল্প আছে কিনা তা স্পষ্ট নয়, যা উভয় পক্ষকে বিপদের দ্বারপ্রান্ত থেকে সরে আসার সুযোগ করে দেবে।

এই জটিল সম্পর্ক অন্তত একবার পরীক্ষা হয়েছিল।

পাঁচ বছর আগে, যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাগদাদে ড্রোন হামলার মাধ্যমে আইআরজিসি কমান্ডার কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তখন অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন যে এটি একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে।

কিন্তু ইরান ইরাকি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে মার্কিন ঘাঁটির কিছু অংশে তাদের পাল্টা আক্রমণের কথা জানিয়েছিলো, যেটা মার্কিন কর্মীদের হত্যা বা উল্লেখযোগ্য ক্ষতি এড়ানো যায়।

কিন্তু এই মুহূর্তটি তার চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

Post a Comment

0 Comments